দীপাবলী রসিক গৌরাঙ্গ দাস

Spread the love

বাংলা তথা ভারতবর্ষে বছরে মাসে তেরোটা পার্বণ। দীপাবলীর উৎসব হল শুধু নিজেরকে পরিষ্কার করে তোলা এবং পরমেশ্বরের মধ্যে আনন্দময় আভরণ প্রাপ্তি ও মহাত্মারূপে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যম। সর্বসাধারণ এই উৎসব পালনের মাধ্যমে নিজের ভগবানের প্রতি ভক্তি, সেবা এবং প্রেমের বিশেষ সুযোগ লাভ করে। যার ফলে জীবনের পার্থিবতা ধীরে ধীরে লাঘব হয়।

সনাতন ধর্মে বহু প্রকার উৎসব রয়েছে, তার মধ্যে দীপাবলী অন্যতম। দীপাবলী শব্দটির অর্থ দীপের আলো। বলা হয়ে থাকে, রাবণকে বধ করার পর ভগবান শ্রীরাম অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, তখন অযোধ্যাবাসীগণ তাঁদের প্রিয় রাজপুত্রের জন্য বিশেষ উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। সেই সময় নাগরিকরা আনন্দে বিভিন্ন মন্দির, গৃহে, রাজপথে, শত শত দীপ, তৈলবাতি, মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে দীপের উৎসব মহাসমারোহে উদযাপিত হয়। অনেকের মতে আবার দীপাবলী বা দেওয়ালীর উৎসব লক্ষ্মীপূজনের।

একটি বিশেষ পৌরাণিক ঘটনার স্বরণ করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, সেই সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুর বধ করেছিলেন। নরকাসুর অত্যাচারী, পাপিষ্ঠ রাজা ছিলেন এবং তিনি স্বর্গ ও পৃথিবীর দেব-শক্তিদের বন্দী করে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ সত্যানভাসার সহায়তায় সেই সময় সত্যানভাসার রূপে সাজিয়া সৈন্যবাহিনীকে নিয়ে নরকাসুরকে বধ করেন। নরকাসুরের মৃত্যুর পর মাতাল পৃথিবীতে এই বিশেষ উৎসবের সূচনা হয় এবং শ্রীকৃষ্ণের অনুরোধে করানো হয়। নরকাসুরের বধের পর সমস্ত দেশ আনন্দে উৎসব উদযাপন করে।

এই দীপাবলীর উৎসবে বিশেষভাবে লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা করা হয়। এই দিনে ঘরে ঘরে ভক্তেরা লক্ষ্মীপূজার বিধান পালন করেন। এই বিশেষ দিনটিতে ঘরে ঘরে সুখ শান্তি ধন ঐশ্বর্য বৃদ্ধি কামনা করে পূজা করা হয়। ভক্তেরা লক্ষ্মীদেবীর বিশেষ পূজার জন্য ঘরে ঘরে সমৃদ্ধি স্থাপন করেন। সকলের সুখে শান্তিতে জীবন অতিবাহিত করার জন্য লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা করা হয়। কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। একেকজন ব্যক্তি তাদের নিজস্ব আনন্দে দীপাবলী করে থাকে।

তাছাড়া বর্ণনা অনুযায়ী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ধন্যময়ী রুক্মিণীর ঐশ্বর্যময়ী দীপালিখা হয়। এই দীপাবলীর সময়কালীন লক্ষ্মীকে স্বরূপে সাজানো হয় এবং মহালক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে রাত্রি দশটায় লক্ষ্মীপূজা আরম্ভ হয়। সারা দেশেই কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে নানা সময়ে ও নানা স্থানে বিশেষভাবে মহাসমারোহে প্রতিপালিত হয়।

পঞ্জিকার বর্ণনা অনুযায়ী কার্তিক মাসের এই বিশেষ তিথি হলো মাসের সবচেয়ে শুভ তিথি। সকলেই এই দীপাবলীর উৎসবে অংশগ্রহণ করে। এ উৎসব আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় উৎসবের একটি। দীপাবলী উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে সমাজের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, আত্মসচেতনতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।

অতএব, দীপাবলী উৎসব সমাজের ঐক্য ও সামঞ্জস্য রক্ষার ক্ষেত্রে একটি সুন্দর উৎসব হিসাবে সর্বদা স্মরণে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *