
মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার ছাতিনাকান্দি গ্রামে অবস্থিত ‘গুপিবাবুর বাড়ি’। সেই রাজপরিবারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এখানেই টানা প্রায় সাড়ে পাচশো বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে এক অনন্য ও প্রাচীন দুর্গাপুজো। পরিবারের একজন সদস্য জানান এই পুজো মূলত এক সাধকের পুজো, তিনি সিদ্ধিলাভ করে দেবী দুর্গার এই চতুভূজা রুপের দর্শন পান, তারপর থেকেই এই সাবেকী চতুভূজা রুপেই হয়ে আসছে এই দুর্গাপূজা। সময়ের স্রোতে যখন অনেক কিছুর রূপ বদলেছে, তখনও এই পুজো আজও বয়ে নিয়ে চলেছে তার নিজস্ব ঐতিহ্য ও রীতিনীতিকে অক্ষত রেখে।
চলতি বছর ২০২৫-এ, সোমবার বোধনের দিন ভোর থেকে গুপিবাবুর বাড়ির দুর্গাপুজোর শুভ সূচনা হয়। ব্রাহ্মণদের মন্ত্রোচ্চারণে পুণ্য ঘট ভরে শুরু হয় দেবীর আরাধনা। পরিবারের সব সদস্য এই ঐতিহ্যবাহী পুজোয় অংশগ্রহণ করেন সম্পূর্ণ ভক্তিভরে।
এই পুজোর একটি বড় বৈশিষ্ট্য — দেবী দুর্গাকে চতুভূজা যোদ্ধা রূপে পূজা করা হয়, যেখানে সাধারণত অন্যান্য পুজোয় দশভুজা রূপেই আরাধনা করা হয়। মায়ের এই মহিমাময় রূপ, পূজা পদ্ধতির বিশিষ্টতা এবং যুগের পর যুগ ধরে পালন হয়ে আসা ছাগবলি— সব মিলিয়ে এক গভীর ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে প্রাচীন এই দুর্গাপূজা।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিষয়, সন্ধিপূজোর মুহূর্তে কামান দেগে পূজোর সূচনা করা হয় — যা আজও পালন করা হয় পূর্বপুরুষদের প্রথা মেনে। কামানের সেই গর্জন যেন কালের গর্ভ থেকে ফিরে আসা এক ঐতিহাসিক ধ্বনি, যা জানান দেয়, মা এসেছেন। এই প্রথা এলাকার মানুষের কাছে এক আবেগের বিষয়।
পুজোর আগেই এলাকায় তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। মণ্ডপ সজ্জা, আলোকসজ্জা, প্রতিমা নির্মাণ— সব কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা যেমন অংশ নিচ্ছেন এই আয়োজনে, তেমনই দূরদূরান্ত থেকেও মানুষ আসছেন এই পুজোর সাক্ষী হতে।
পুজোর প্রতিটি ধাপে যাতে সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পন্ন হয়, তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পূজা কমিটি একসঙ্গে কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি, দর্শনার্থীদের সুবিধা নিশ্চিত করাও অন্যতম লক্ষ্য। সব মিলিয়ে, মুর্শিদাবাদ জেলায় ২০২৫ সালের এই দুর্গোৎসব যেন হয়ে উঠেছে ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক মিলনমেলা।
এই পুজো শুধুই কোনও আচার নয় — এটা ইতিহাস, বিশ্বাস আর প্রজন্মের পর প্রজন্মের শ্রদ্ধা মিশে থাকা এক প্রাচীন স্মারক, যেহেতু সাধনা করে সিদ্ধ করে এই পুজোর সূচনা হয়েছে তাই সিদ্ধ দুর্গাপূজা বলা যায়। গুপিবাবুর বাড়ির দুর্গাপুজো তাই শুধুমাত্র একটি পুজো নয়, বরং এটি এক জীবন্ত ইতিহাস, যা আগামী দিনেও নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্যের মূল্য শেখাবে।
এই বছর ২০২৫ সালের মহাসপ্তমীর দিন ক্লাসমেট ভেঞ্চারস এর টিম উপস্থিত ছিলেন এই রাজবাড়িতে। টিমের তরফ থেকে উপস্থিত ছিলেন বিশাল বিশ্বাস, সৌরভ আম্বালি, শুভঙ্কর সরকার, সুজয় অধিকারী এবং শিবায়ন।