IFFI ২০২৫: গোয়ায় বিশ্ব চলচ্চিত্রের মহামিলন – প্রথম দিন থেকেই উচ্ছ্বসিত দর্শক-নির্মাতারা

Spread the love

গোয়া, ২১ নভেম্বর ২০২৫

গোয়ার সৈকত শহর আজ আবারও রঙে, আলোয় ও ক্যামেরার ঝলকে ভরে উঠল। শুরু হল ৫৬তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, IFFI ২০২৫। বিশ্বের ৮১টি দেশের চলচ্চিত্র শিল্পীরা জমায়েত হয়েছেন এই চলচ্চিত্র-মহোৎসবকে কেন্দ্র করে। সকাল থেকেই ডোনা পাউলায় উৎসব চত্বরে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো—বিশেষ করে তরুণ নির্মাতা, শিক্ষার্থী, বিদগ্ধ সমালোচক এবং সাধারণ দর্শকদের উচ্ছ্বাস উৎসবের পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করেছে।

এই বছরের থিম—“Convergence of Creativity & Technology”, অর্থাৎ সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির সমন্বয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা জানিয়েছেন, সিনেমার ভবিষ্যৎ শুধু গল্প বলার কৌশলে নয়, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেও নতুন যুগে প্রবেশ করছে।

উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে দেখানো হয় ব্রাজিলিয়ান নির্মাতা গ্যাব্রিয়েল মাস্কারোর ছবি “The Blue Trail”, যার গল্পে স্বাধীনতার খোঁজে অ্যামাজনের জলে ভাসমান এক বৃদ্ধার যাত্রা উঠে এসেছে। ছবিটি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শকরা দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায়—যা উৎসবের শুরুতেই বিশ্বমানের চলচ্চিত্রের স্বাক্ষর তুলে ধরে।

এবারের উৎসবে ২৪০টি আন্তর্জাতিক ছবি, ১৩টি বিশ্বপ্রিমিয়ার, এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এশিয়ান ও ভারতীয় প্রিমিয়ার রয়েছে। প্রতিটি থিয়েটারের সামনে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষমাণ মানুষের ভিড় প্রমাণ করে, IFFI শুধু একটি উৎসব নয়—ভারতের সাংস্কৃতিক কূটনীতির অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যমও বটে।

প্রতিদিনের মতো আজও উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল “Creative Minds of Tomorrow”—যেখানে দেশের ১০০ জন নির্বাচিত তরুণ প্রতিভা অংশ নিচ্ছেন। চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ নির্মাতাদের জন্য এই সেশনকে বলা হচ্ছে IFFI-এর সবচেয়ে প্রভাবশালী উদ্যোগ। আলোচনায় উঠে এসেছে AI-নির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণ, নতুন স্টোরিটেলিং ট্রেন্ড, এবং গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশনের পরিবর্তিত ছবি।

এদিকে গোয়ার রাস্তায় ছিল আলাদা উৎসবের রং। IFFI-এর বিশেষ Opening Parade-এ বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নৃত্য ও সঙ্গীতে অংশ নেন। পর্যটকরাও এই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের আসর উপভোগ করেছেন দারুণভাবে।

উৎসবের প্রথম দিনই সকলের নজর কেড়ে নিয়েছেন দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রতারকা রজনীকান্ত, যিনি এ বছর IFFI-এর বিশেষ সম্মান পাবেন তাঁর ৫০ বছরের সুবর্ণ চলচ্চিত্র যাত্রার স্বীকৃতিস্বরূপ। তাঁর উপস্থিতিতেই জমে ওঠে লাল গালিচার অনুষ্ঠান, যেখানে দেশের বিভিন্ন ভাষার অভিনেতা-অভিনেত্রী ও পরিচালকরা যোগ দেন।

এছাড়া AVGC-XR (অ্যানিমেশন, VFX, গেমিং ও এক্সটেন্ডেড রিয়ালিটি)-শিল্পকে কেন্দ্র করে প্রথমবারের মতো “WAVES Bazaar” উদ্বোধন হয়, যা তরুণ টেক-স্টার্টআপদের জন্য বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। উৎসবে প্রযুক্তি-উদ্ভাবনের এমন উপস্থিতি নির্মাতা-দর্শক উভয়ের কাছেই বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।

প্রতিযোগিতামূলক বিভাগে এবার সেরা ছবিকে দেওয়া হবে গোল্ডেন পেকক পুরস্কার, যার দ্বন্দ্ব ইতিমধ্যেই তুঙ্গে। বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র সমালোচকেরা মত দিয়েছেন যে এ বছর প্রতিযোগিতা হবে অত্যন্ত কঠিন—কারণ নির্বাচিত ছবিগুলোর মধ্যে শিল্পমান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনী ব্যবহার দুটোই সমান শক্তিশালী।

দিন শেষে সমুদ্রতটে আলো জ্বলে উঠতেই গোয়া যেন আবারও সিনেমার রাজ্যে পরিণত হয়। উৎসব চত্বরে দাঁড়িয়ে এক তরুণ চলচ্চিত্র শিক্ষার্থী বললেন—
“এখানে এসে মনে হয়, স্বপ্ন দেখা ভুল নয়। এই উৎসব আমাকে বিশ্বাস করায়—একদিন আমার ছবিও এই মঞ্চে উঠবে।”

IFFI ২০২৫-এর প্রথম দিনের সাফল্য দেখিয়ে দিল—বিশ্ব চলচ্চিত্রের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গোয়া এ বছরও তার মর্যাদা ধরে রেখেছে। আগামী কয়েকদিনে আরও বহু ছবি, আলোচনা, প্রদর্শনী এবং পুরস্কারের মাধ্যমে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা উপভোগ করবেন এক অসাধারণ সাংস্কৃতিক মিলনমেলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *