
নিজস্ব সংবাদদাতা, জিয়াগঞ্জ
মঙ্গলবার বিকেল থেকেই উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ শহর। শিখ সম্প্রদায়ের মানুষেরা মেতে ওঠেন শিখ ধর্মগুরু গুরু নানক দেবজির ৫৫৬তম জন্মজয়ন্তী উদ্যাপনে। বুধবার ভোর ৫টায় বাদুরতলা সংলগ্ন গুরুদুয়ারা থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য নগর কীর্তন। শোভাযাত্রায় অংশ নেন বহু শিখ ভক্ত, সঙ্গে ছিল ব্যান্ড পার্টি, ধর্মীয় পতাকা ও পবিত্র গ্রন্থ সাহেব। পুরনো পরম্পরা মেনে শোভাযাত্রা জিয়াগঞ্জের রাজপথ পরিক্রমা করে পৌঁছে যায় এনাতুলিবাগ সংলগ্ন ব্রিটিশ আমলে নির্মিত গুরু নানক আখাড়া সাহেব প্রাঙ্গণে—যা আজও গুরু নানকের স্মৃতিবিজড়িত এক ঐতিহ্যবাহী স্থান। সেখানে প্রভাতফেরি শেষে সকলকে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। পরবর্তীতে ফের নগর পরিক্রমা করে বাদুরতলার গুরুদুয়ারায় এসে শেষ হয় শোভাযাত্রা।
গুরুদুয়ারা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় নরনারায়ণ সেবা—যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বহু মানুষ অংশ নেন। জিয়াগঞ্জ গুরুদুয়ারা কমিটির সেক্রেটারি সন্তোষ সিং চাওলা বলেন, “গুরু নানক দেবজির আদর্শই মানুষকে ভালো থাকা ও ভালো রাখার শিক্ষা দেয়। সেই বার্তাই আমরা আজ শহরের সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।”

আগামীকাল, বৃহস্পতিবার, দুপুরে এনাতুলিবাগের গুরু নানক আখাড়া সাহেব প্রাঙ্গণে সাধারণ ভক্তদের বসে প্রসাদ ভোজনের আয়োজন করা হয়েছে। বাঙালি, মারোয়ারি, মুসলিম—সব সম্প্রদায়ের মানুষ এই মিলনমেলায় একত্রিত হন।
প্রতিবছরের মতো এ বছরও স্থানটি রূপ নেয় এক তীর্থক্ষেত্রে। প্রতিদিন ভোর ৪টেয় শুরু হয় গুরুদুয়ারার প্রথম প্রার্থনা। সকাল ৭টা থেকে চলে কীর্তন বাণী, আর সন্ধ্যা ৬টা ৩০ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গুরু নানকের প্রতি নিবেদিত প্রার্থনায় মুখরিত থাকে প্রাঙ্গণ। জিয়াগঞ্জ শিখ সমাজের প্রেসিডেন্ট গুরুদয়াল সিং বাগ্গা বলেন, “গুরু নানকের উপদেশের মূল কথাই সৌহার্দ্য ও মানবতা। আমরা চাই জিয়াগঞ্জ আজিমগঞ্জবাসীর জীবনে সেই আলো ছড়িয়ে পড়ুক।”

গুরু নানকের জন্মজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে এই আনন্দোৎসব জিয়াগঞ্জে যেন মিলনের বার্তা বয়ে আনল—ধর্মের ভেদ নয়, মানবতার বন্ধনেই সবাই এক সূত্রে বাঁধা।