
নিজস্ব সংবাদদাতা:
কলকাতা, ৯ অক্টোবর
লাল রঙের সেই ডাকবাক্স আজও যেন সাক্ষী হয়ে আছে এক যুগের। যেখানে শব্দ ছিল না, ছিল কেবল কাগজে লেখা অনুভব। প্রযুক্তির ব্যস্ত পৃথিবীতে এখন সবকিছু পৌঁছে যায় এক ক্লিকে, অথচ সেই কাগজে লেখা চিঠির গন্ধ, ডাকপিয়নের কণ্ঠে “চিঠি এসেছে” — আজও আমাদের স্মৃতির পাতায় অমলিন। আজ, ৯ অক্টোবর, সেই স্মৃতির পথ ধরে পালিত হচ্ছে ভারতীয় ডাক পরিষেবা দিবস।
ভারতের ডাক পরিষেবার সূচনা হয় ১৭৬৬ সালে, ব্রিটিশ আমলে, লর্ড ক্লাইভের উদ্যোগে। তবে ১৮৫৪ সালে লর্ড ডালহৌসি ডাকব্যবস্থাকে নতুন করে সংগঠিত করেন Indian Post Office Act-এর মাধ্যমে। সেই বছরই আনুষ্ঠানিকভাবে জন্ম নেয় ভারতীয় ডাক বিভাগ। শতাধিক বছরের সেই প্রতিষ্ঠান আজও দেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অবিচ্ছেদ্যভাবে।
দেশজুড়ে প্রায় ১.৫৫ লক্ষেরও বেশি ডাকঘর— এটাই বিশ্বের বৃহত্তম ডাক নেটওয়ার্ক। চিঠি, মানি অর্ডার, বীমা, সঞ্চয় থেকে শুরু করে আধুনিক ই-পোস্ট অফিস, ইন্ডিয়া পোস্ট পেমেন্টস ব্যাংক, এমনকি ই-কমার্স পার্সেল ডেলিভারি— সবই আজ এই বিভাগের পরিষেবার অংশ।
তবুও, ডাকের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তার মানবিক ছোঁয়ায়। এক সময় ডাকপিয়নই ছিলেন গ্রামের খবরের বাহক, আনন্দের বার্তাবাহক, কখনও আবার দুঃখের দূত। তাঁর হাতে পৌঁছে যেত ভালোবাসা, অপেক্ষা, আর দূরের মানুষের খবর। সেই ডাকপিয়নের হাঁক আজও গ্রামীণ ভারতকে আবেগে ভরিয়ে দেয়।
বর্তমান সময়ে ডাক বিভাগ নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তুলছে। আধুনিক প্রযুক্তির হাত ধরে এসেছে ডিজিটাল পার্সেল ট্র্যাকিং, অনলাইন পোস্টাল সার্ভিস, এবং আধার সংযুক্ত পরিষেবা। শতবর্ষের ঐতিহ্য আজ ডিজিটাল যুগেও তার নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে সগর্বে।
প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সারা দেশে ডাক বিভাগের নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কোথাও ডাকবাহকদের সংবর্ধনা, কোথাও ডাকটিকিট প্রদর্শনী, আবার কোথাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করা হচ্ছে দেশের এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানকে।
চিঠির যুগ হয়তো পেরিয়ে গেছে, কিন্তু ডাকের স্মৃতি এখনও হৃদয়ে জেগে থাকে। কাগজে লেখা ভালোবাসা, ডাকবাক্সে ফেলা প্রতীক্ষা— এই অনুভবই আজও মানুষকে মনে করিয়ে দেয়, যোগাযোগ মানে শুধু বার্তা নয়, সম্পর্কের বন্ধন।
ভারতীয় ডাক বিভাগ তাই শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি এক অনুভব, এক ঐতিহ্য — যা প্রমাণ করে, যতই যুগ বদলাক, চিঠির মায়া কখনও হারিয়ে যায় না।