প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বাংলা সিনেমার ‘ইন্ডাস্ট্রি’

Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কলকাতা – আজ অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন। ছয় দশকের জীবন আর চার দশকেরও বেশি সময়ের অভিনয় যাত্রা তাকে শুধু একজন তারকা নয়, বরং বাংলা সিনেমার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেছে। বাণিজ্যিক থেকে সমান্তরাল—সব ধারার ছবিতেই নিজের অভিনয় দক্ষতায় তিনি প্রমাণ করেছেন, কেন তাকে “টলিউড ইন্ডাস্ট্রি” বলা হয়।

১৯৬২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্ম প্রসেনজিতের। বাবা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন জনপ্রিয় হিন্দি ও বাংলা অভিনেতা। ছোটবেলা থেকেই সিনেমার পরিবেশে বেড়ে ওঠা প্রসেনজিৎ পড়াশোনা করেছেন সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল ও পরে কলকাতার কলেজে। তবে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহই তাকে গড়ে তোলে।

শিশু অভিনেতা হিসেবে তার অভিষেক ঘটে হৃষিকেশ মুখার্জির চোটি সি বাটো ছবিতে। নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ হয় ১৯৮৩ সালে তরুণ মজুমদারের দুটি পাতা সিনেমায়। প্রথম দিকে সাফল্য হাতছাড়া হলেও ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলা চলচ্চিত্রের ভরসার মুখ।
আশির দশকের শেষ থেকে নব্বইয়ের দশকে তিনি বাণিজ্যিক বাংলা সিনেমার প্রধান নায়ক। অমর সঙ্গী, অগ্নিসাক্ষী, চোখের আলো, শত্রু সহ একাধিক ব্লকবাস্টার ছবির নায়ক হয়ে দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেন। প্রেম, অ্যাকশন বা পারিবারিক – প্রতিটি চরিত্রেই তিনি ছিলেন সমান সাবলীল।
দুই হাজার সালের পর প্রসেনজিৎ নতুন রূপে আবির্ভূত হন। ঋতুপর্ণ ঘোষের উৎসব, চোখের বালি, দোসর কিংবা চিত্রাঙ্গদা ছবিতে তার অভিনয় সমালোচকদের মুগ্ধ করে। সৃজিত মুখার্জির অটোগ্রাফ, মনের মানুষ ও জাতিস্মর তাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেয়।

বাংলা ছাড়াও হিন্দি সিনেমায় কাজ করেছেন তিনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তার ছবি প্রশংসিত হয়েছে। একাধিক জাতীয় পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার এবং অন্যান্য সম্মানে ভূষিত হয়েছেন প্রসেনজিৎ
চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি প্রযোজক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবে সমান জনপ্রিয়। তার প্রযোজনা সংস্থা থেকে একাধিক জনপ্রিয় সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান তৈরি হয়েছে।

প্রসেনজিতের স্ত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় নিজেও জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাদের একমাত্র সন্তান তৃষাঞ্জিত। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনায় থাকলেও অভিনেতা হিসেবে তিনি সবসময় কাজকেই গুরুত্ব দিয়েছেন।
ওটিটি যুগেও সমানভাবে কাজ করছেন প্রসেনজিৎ। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে একই পর্দায় দাঁড়িয়েও নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। দর্শকের কাছে তিনি এখনও প্রথম সারির নায়ক।

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম থেকে শুরু করে তার দীর্ঘ ক্যারিয়ার আজ বাংলা সিনেমার এক মহাকাব্যের মতো। তিনি প্রমাণ করেছেন—সাফল্য শুধু জনপ্রিয়তায় নয়, বরং সময়ের সঙ্গে নিজেকে বদলে নেওয়ার ক্ষমতাতেও। তার জীবন ও কাজ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *